প্রকাশিত:
৮ মে ২০২৫, ১১:১৫
গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে গত নভেম্বর থেকে শীতকালীন সবজি-খাবারের প্রাপ্যতা বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ১২ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে একক অঙ্কে নেমে আসে।মার্চ মাসে তা ৮.৯৩ শতাংশে অব্যাহত থাকে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির প্রধান অবদান ছিল খাদ্যের ৪২.৭১ শতাংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রয়েছে গৃহায়ণ (১৩.০৯ শতাংশ) এবং এর পরেই রয়েছে পোশাক ও জুতার (৯.৩৭ শতাংশ)। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গড় মূল্যস্ফীতি বাড়ার ক্ষেত্রে বড় অবদান রয়েছে চালের।
মূল্যস্ফীতি বাড়ার ক্ষেত্রে সব চালের অবদান রয়েছে ১৪.৬২ শতাংশ, মাছের অবদান ১১.৫৮ শতাংশ এবং শাক-সবজির ৬.০৮ শতাংশ। ওপরের হিসাবটিতে গড় মূল্যস্ফীতি বাড়ার ক্ষেত্রে এসবের অবদান তুলে ধরা হয়েছে। যদি শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার জন্য এসব পণ্যের অবদান তুলে ধরা হয়, তাহলে চালের ভূমিকা ৩৪.১৪ শতাংশ, মাছের ২৭.০৫ শতাংশ এবং শাক-সবজির ১৪.২০ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে মার্চেও মৌসুমি সবজির দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কমে।
মার্চ মাসে খাদ্য শ্রেণির ভিত্তিতে শীর্ষ চারটি খাদ্য পণ্যের প্রভাব রয়েছে। এ সময় বেগুনের প্রভাব ১৭.১২ শতাংশ, মাঝারি চাল ১৬.৭৩ শতাংশ, মোটা চাল ১২ শতাংশ এবং ইলিশ ১১.৩৭ শতাংশ।
জিইডির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কিছু জেলায় আকস্মিক বন্যার ফলে আমনের উৎপাদন হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ মূল্যের কারণে চালের দাম মূলত বেড়ে যায়। আলু ও পেঁয়াজের উচ্চ উৎপাদন এই সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সাহায্য করেছে। রমজান এবং বাংলা নববর্ষের কারণে বেগুন ও ইলিশের মূল্যবৃদ্ধি যুক্তিসংগত, তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে চালের মূল্যবৃদ্ধির দিকে তাৎক্ষণিক মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে জিইডি।
সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ এলাকায় মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য আরো মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
বর্ধিত রেমিট্যান্সের মধ্যে বহিরাগত খাত শক্তিশালী হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রেকর্ড মাত্রা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার কারণে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থপাচার কার্যক্রম কমেছে। জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২১.৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের ১৬.৬৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়েছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখন প্রায় ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি বছরে ১১.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা মূলত তৈরি পোশাক খাতের কারণে।
ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কের প্রতি বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করেছে এবং রপ্তানিকারকদের জন্য স্বস্তি এনেছে বলে উঠে এসেছে জিইডির প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। উচ্চতর শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
মন্তব্য করুন: