বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • চীনের তৈরি HQ9 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিরক্ষা কাজে কতটা সক্ষম
  • প্রসেনজিতের মেয়ে প্রেম করছেন, ফুফু বললেন ‘খুব মিষ্টি’
  • ভারতের ২০টিরও বেশি বিমানবন্দর বন্ধ
  • বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ
  • সরকার কেন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না
  • সঙ্কটের সময় সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি আসছে বড় সিদ্ধান্ত
  • পাকিস্তানি অভিনেত্রীকে দেখতে ভিপিএন কিনছে ভারতীয়রা
  • আ.লীগকে সুবিধা দেওয়ায় ইউনূস সরকারকে একহাত নিলেন হাসনাত
  • গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় আরও ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত
  • বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান পঞ্চম

যন্ত্র নয় গাছ লাগান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
৭ মে ২০২৫, ১৬:০৭

ঢাকার বায়ুর মানোন্নয়নে গত পাঁচ দিনে দুটি পদক্ষেপের খবর জানতে পারলাম। দুটি খবরই প্রকাশ করেছে কালের কণ্ঠ অনলাইন। তাদের ০১ মে তারিখের একটি খবরের শিরোনাম ছিলো- 'ঢাকায় ৫০ স্থানে বসছে এয়ার পিউরিফায়ার, কতটা সুফল মিলবে'। একই বিষয়ে ০৫ মে তারিখে তাদের আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিলো- 'বাতাসের গুণগতমান যাচাইয়ে যন্ত্র স্থাপন করা হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক'।

ঢাকার বায়ুর মানোন্নয়নে গৃহীত দুটি পরিকল্পনার কোনটিই বাস্তবসম্মত নয়। অকার্যকর এইসব বিলাসী প্রকল্প কিছুদিন পরেই অপচয়ের খাতায় উঠবে। যদিও বলা হয়েছে, দুটি প্রকল্পের কোনটির জন্যই অর্থ ব্যয় করতে হবে না। সহায়তা হিসেবেই পাওয়া যাবে ডিভাইসগুলো।

কথা হচ্ছে জেনে বোঝে কেনো এমন সহায়তা নেওয়া! বায়ুর মানোন্নয়নে বাস্তবসম্মত টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য স্পন্সর বা সহায়তা চাওয়া যেতে পারতো। প্রাপ্ত সহায়তা কাজেও লাগতো।

বিদ্যুৎ চালিত যে ৫০টি এয়ার পিউরিফায়ার ডিভাইসের কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর প্রতিটির ওজন ১৫০০ কেজির মতো এবং সাইজে একটা প্রাইভেট কারের সমান। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দাবী করেছেন, প্রতিটি ডিভাইস ১০০ গাছের সমপরিমাণ বায়ু পরিশোধন ও শীতলীকরণে সক্ষম।

বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন জনবহুল শহরে পূর্বে স্থাপিত এইসব ডিভাইস বায়ুদূষণ রোধে কার্যকারিতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকার বাতাসের গুণগতমান যাচাইয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ২৫টি যন্ত্র স্থাপনের কথা ভাবছে! সুইজারল্যান্ডের বায়ুর মান নির্ণয়কারী সংস্থা আইকিউএয়ার ঢাকার বাতাসের মান নিয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট দিচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কোথায় কখন কোন মাত্রার দূষণ আছে এবং সেখানে চলাচলকারী লোকজনের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তা ফ্রিতে জানিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া বায়ু দূষণের সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রতিদিনই জানাচ্ছে আইকিউএয়ার, যার বরাত দিয়ে দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক প্রতিদিন রিপোর্ট করছে। এতদস্বত্ত্বেও ২৫টি যন্ত্র বসিয়ে বাতাসের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কেনো প্রয়োজন তা ব্যাখ্যার দাবী রাখে।

টেকসই সমাধানে করণীয়:

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) জানিয়েছে, গত ৯ বছরে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে পেরেছে! বাকি দিনগুলোতে দূষিত বাতাসে শ্বাস নিয়েছে। আইকিউএয়ারের মতে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব ২০১-৩০০ হলে (ওব্লিউএইচও কর্তৃক গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫) তা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে গণ্য করা হয়। ঢাকার বাতাসে পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব ৫৪০ ছাড়ানোর রেকর্ডও আছে! এই অবস্থা থেকে উত্তরণের টেকসই সমাধান হিসেবে যা করা প্রয়োজন-

১. শহরের সড়কের দুই ধার, সড়ক দ্বীপ, সড়ক বিভাজক, স্কুল-কলেজ ও খেলার মাঠের চারপাশ, পার্কের ফাঁকা যায়গা ও খালের দুই ধারে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ করা।

২. রাজধানীতে পুরনো লক্কড়-ঝক্কর বাসের চলাচল বন্ধ করা।

৩. চলাচলের সময় বালুর ট্রাক, নির্মাণ সাইটের মালামাল ঢেকে রাখার নিয়ম কঠোরভাবে মনিটর করা।

৪. পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে ফুটপাথ, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, গলিপথ নিয়মিত পরিষ্কার করা।

৫. পুকুর ও খাল ভরাট করতে না দিয়ে বিদ্যমান খালগুলো খনন করে প্রবাহ ঠিক রাখা।

৬. ঢাকার আশেপাশে থাকা অননুমোদিত ইটভাটা বন্ধ করা।

৭. উন্মুক্ত স্থানে আবর্জনা পোড়ানো নিষিদ্ধ করা।

৮. যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এটি করতে পারলে গাড়িগুলো কম কার্বন নি:সরণ করবে।

৯. ঢাকার ফুটপাথ হকার ও দোকানপাট মুক্ত করা প্রয়োজন। এতে হাঁটার সুযোগ বাড়বে। গাড়ির উপর চাপ কমবে।

ঘরের কোণে মরা টিকটিকির দুর্গন্ধ দূর করতে সারা ঘরে দামি সুগন্ধি ছড়িয়ে সুফল পাওয়া যাবে না, মরা টিকটিকি খুঁজে বের করে সরাতে হবে। তবেই টেকসই সুফল মিলবে। তাই রাজধানীর বায়ুর মানোন্নয়নে যন্ত্র নয়, গাছ লাগান।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর