বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • চীনের তৈরি HQ9 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিরক্ষা কাজে কতটা সক্ষম
  • প্রসেনজিতের মেয়ে প্রেম করছেন, ফুফু বললেন ‘খুব মিষ্টি’
  • ভারতের ২০টিরও বেশি বিমানবন্দর বন্ধ
  • বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ
  • সরকার কেন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না
  • সঙ্কটের সময় সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি আসছে বড় সিদ্ধান্ত
  • পাকিস্তানি অভিনেত্রীকে দেখতে ভিপিএন কিনছে ভারতীয়রা
  • আ.লীগকে সুবিধা দেওয়ায় ইউনূস সরকারকে একহাত নিলেন হাসনাত
  • গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় আরও ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত
  • বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান পঞ্চম

এক ভূখণ্ড, দুই রাষ্ট্র, অগণিত কান্নার উপত্যকা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১ মে ২০২৫, ১৫:২৩

একটি উপত্যকা, যেখানে একদিন পাহাড়ের কোল ছুঁয়ে ছুটে যেত মুক্তোর মতো নদী। শিশির ভেজা ঘাসে ভোরের আলো ঝিকমিক করত, বাতাসে ভেসে বেড়াত বসন্তের গান। সেই কাশ্মীর আজ আতঙ্কের কুয়াশায় ঢাকা, নদীর জলে লেগে আছে রক্তের ছাপ, স্বপ্নগুলো ছিন্নভিন্ন বুলেটের শব্দে। কাশ্মীর এখন আর কেবল একটি ভূখণ্ড নয়—এ এক হারিয়ে যাওয়া সময়, যাকে ছিন্ন করেছে ইতিহাসের নির্মম কলম।

১৯৪৭। উপমহাদেশের বিভাজনের বছর। জন্ম নিল ভারত ও পাকিস্তান। জন্ম নিল বিভেদের, রক্তের, কান্নার আরেক অধ্যায়—কাশ্মীর সংকট। স্বাধীন একটি রাজ্য, যার শাসক হরিসিংহ হিন্দু, কিন্তু ৭৫ শতাংশ জনগণ মুসলিম। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীনতা, কারো সঙ্গে না জড়িয়ে। কিন্তু ইতিহাস কি কাউকে ছাড়ে?

অক্টোবরেই পাকিস্তান-সমর্থিত উপজাতীয়রা আক্রমণ চালায় কাশ্মীরে। বারামুল্লা শহরে প্রথম রক্ত ঝরে। শ্রীনগর পড়ে যায় অরক্ষিত অবস্থায়। ভারতীয় সেনা সহায়তার শর্ত রাখে—কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। ২৬ অক্টোবর, মহারাজা হরিসিংহ সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরদিন ভারতীয় সেনা নামে কাশ্মীরে। শুরু হয় যুদ্ধ, শুরু হয় বাস্তুচ্যুতি, শুরু হয় এক জাতির দীর্ঘ শোকযাত্রা।

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়, সৃষ্টি হয় ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’। প্রতিশ্রুত গণভোট? হারিয়ে যায় রাজনৈতিক ছলনায়। কাশ্মীর বিভক্ত হয়, কিন্তু হৃদয়গুলো? চিরকাল দ্বিখণ্ডিত থেকে যায়।

চীন এসে পড়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে। লাদাখের অংশ আকসাই চীন দখল করে। পাকিস্তান ১৯৬৩ সালে সাক্সগাম উপত্যকা দিয়ে দেয় চীনকে। ১৯৬৫-তে আবার যুদ্ধ, অপারেশন জিব্রালটার, আবার মৃত্যু, আবার চুক্তি—তাসখন্দকাশ্মীরীদের কিছু স্বস্তি এসেছিল ৩৭০ অনুচ্ছেদে। নিজস্ব আইন, নিজস্ব পরিচয়—অন্তত ছিল একটুখানি স্বপ্ন। ২০১৯ সালে সেই স্বপ্নও ভেঙে যায়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়। রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে কাশ্মীরকে ভাগ করা হয় দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। পুরো উপত্যকা নিমজ্জিত হয় নিঃশব্দ শোকে—নেট নেই, ফোন নেই, কণ্ঠ নেই।

সাত দশকের বেশি সময় কেটে গেছে। প্রশ্নগুলো আজও মীমাংসিত নয়। বরং প্রতিটি বছর, প্রতিটি সংঘর্ষ, প্রতিটি হারানো জীবন কাশ্মীরকে করে তুলেছে এক গা ছমছমে শোকস্মারক। এই উপত্যকা এখন আর কেবল ভূগোল নয়, এটা এক জীবন্ত স্মৃতি—যেখানে প্রতিটি পাথর, প্রতিটি নদী বয়ে নিয়ে চলে রক্ত, কান্না আর প্রশ্নের স্রোত।

কাশ্মীর এক নিশ্চুপ নদী—যার জলে ভাসে হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনার আর্তনাদ।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর