বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • চীনের তৈরি HQ9 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিরক্ষা কাজে কতটা সক্ষম
  • প্রসেনজিতের মেয়ে প্রেম করছেন, ফুফু বললেন ‘খুব মিষ্টি’
  • ভারতের ২০টিরও বেশি বিমানবন্দর বন্ধ
  • বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ
  • সরকার কেন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না
  • সঙ্কটের সময় সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি আসছে বড় সিদ্ধান্ত
  • পাকিস্তানি অভিনেত্রীকে দেখতে ভিপিএন কিনছে ভারতীয়রা
  • আ.লীগকে সুবিধা দেওয়ায় ইউনূস সরকারকে একহাত নিলেন হাসনাত
  • গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় আরও ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত
  • বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান পঞ্চম

সংকুচিত হচ্ছে অর্থনীতি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসনের অবসানের আট মাস পেরিয়ে গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরলেও অব্যাহতভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ব্যবসাবাণিজ্যের মন্দা পরিস্থিতি কাটছেই না। বাড়ছে বেকারত্ব। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মতভেদের কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ভাটা পড়েছে।

যদিও বিনিয়োগ সামিট করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই রয়েছেন পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। পাশাপাশি আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। নতুন কোনো শিল্পকারখানা তো হচ্ছেই না; বরং গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

যার ফলে কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বড় ধরনের ধাক্কার মধ্য দিয়ে পরিবর্তন এসেছে। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ীসহ অর্থবাণিজ্য সম্পর্কিত সব খাতের ওপর প্রভাব তো পড়েছেই। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হতে পারে সেটা নিয়ে তারাও শঙ্কায় রয়েছেন। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও সংকুচিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে।

শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী- ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কম। এদিকে আবার দেশে নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এ বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ ছাড়া গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ প্রায় দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক গড় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ সরকারের লক্ষ্য ছিল ৬ শতাংশে আটকে রাখা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরও মূল্যস্ফীতির চাপ ৬ দশমিক ৫ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, আরও কমবে। যার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে দারিদ্র্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিগত ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল। একইভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার এক দশকের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বছর শেষে এবার বাজেট বাস্তবায়ন ৮০ শতাংশেরও কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আগের সরকারের ধারাবাহিক অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতে বাড়ছে ঋণ অবলোপন। এখন পর্যন্ত এ অঙ্ক ৮১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণ আড়াল করা হয়েছে, এটা আর মূল খাতায় দেখানো হবে না।

এরপরও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ বা ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ।

৫ আগস্টের পর রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকে এলসি খোলার জটিলতা কমেছে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন। রিজার্ভ আবারও ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে ডলারের দাম কমছে না কিছুতেই। এখনো ব্যাংকিং খাতের বাইরে ডলারের দাম ১২২ টাকার বেশি। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে পিএমআই সূচকের মান কমেছে।

দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিকে অর্থনীতির প্রধান চারটি খাতে সম্প্রসারণের গতি কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স বা পিএমআই সূচকের মান ছিল ৬৪ দশমিক ৬। জানুয়ারিতে যা ছিল ৬৫ দশমিক ৭। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে সূচকের মান কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর অর্থ হলো, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের গতি কমেছে। এ ধারা সামনে আরও দুই বছর অব্যাহত থাকবে বলে ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর