বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • চীনের তৈরি HQ9 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিরক্ষা কাজে কতটা সক্ষম
  • প্রসেনজিতের মেয়ে প্রেম করছেন, ফুফু বললেন ‘খুব মিষ্টি’
  • ভারতের ২০টিরও বেশি বিমানবন্দর বন্ধ
  • বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ
  • সরকার কেন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না
  • সঙ্কটের সময় সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি আসছে বড় সিদ্ধান্ত
  • পাকিস্তানি অভিনেত্রীকে দেখতে ভিপিএন কিনছে ভারতীয়রা
  • আ.লীগকে সুবিধা দেওয়ায় ইউনূস সরকারকে একহাত নিলেন হাসনাত
  • গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় আরও ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত
  • বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান পঞ্চম

ইসলামী ব্যাংকে জলিল কাহিনী

আওয়ামী স্টাইলে নতুন ব্যাংক খেকোদের দৌরাত্ম্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৩৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠানের অনূকুলে ২৫০ কোটি টাকার এই ঋণ অনুমোদন করা হয়। সম্প্রতি ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি বড় অংকের এই ঋণটি অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত নথিতে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা উঠে আসে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকটি এখনও পুরোপরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করা টাকায় চলছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের পর্যাপ্ত টাকা দিতে পারছে না। অথচ অনিয়ম শুরু করেছে, এটা দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পর নামে-বেনামে বিপুল অংকের টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শুধু টাকা নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটাও ধ্বংস করে দিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর কোনো নতুন ঋণ দিতে নিষেধ করা হয়েছিল, অথচ সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। এই ঋণ অনুমোদন করেন বর্তমান পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল। এই ঋণ অনুমোদনেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অংক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ঋণ অনুমোদন সভা শুরুর দিন সকাল বেলা তড়িঘড়ি করে তার মৌখিক নির্দেশে ঋণের অংক বাড়িয়ে করা হয় ২৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণ খেলাপি এবং ১৮ কোটি টাকার অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও ঋণ অনুমোদন করা হয়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ ও বৃদ্ধি রহিত করা আছে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। ঋণ দেওয়ার কথা ছিল মোট আমানতের ৯২ শতাংশ, অথচ ব্যাংকের এডিআর (ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষায় ঋণকে বিনিয়োগ ও এডিআরকে আইডিআর বলা হয়) ৯৩ শতাংশ, এখানে অফশোর ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সেটা নিলে এডিআর ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এরপরও কিভাবে নতুন ঋণ অনুমোদন হয় বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা।

যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, সে প্রতিষ্ঠানকে নতুন ঋণ:

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার আগে মো. আব্দুল জলিল এই ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে যোগদান করেন এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ইসলামী ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার গ্রাহক ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডে ব্যাংকিং বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে যোগদান করেন। তার সাবেক কর্মপ্রতিষ্ঠানের অনুকুলেই এই ঋণের অনুমোদন করেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. এ. বাশার।

স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ:

এদিকে ঋণ অনিয়েমের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। আব্দুল জলিল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ হওয়ার পর তিনি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হন। এরপর আপন মেয়ের জামাইয়ের মামা ফায়জুল কবির, যিনি ২০১৯ সালে ইসলামী ব্যাংক থেকে অবসর নেন, তাকে গত ৮ অক্টোবর জেনারেল ম্যানেজার পদ মর্যাদায় নিয়োগ দেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ফাউেন্ডেশনের ২২৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আবুল খায়র নামের একজন আত্মীয়, যার বাড়ি নলছিটি, ঝালকাঠি, তাকে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বরিশালের ড. আলতাফ উদ্দীন নামে আরও একজন আত্মীয়কে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, বরিশালের সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ দেয়। এভাবে তিনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল- রাজশাহী, মতিঝিল, কাকরাইলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজের মেয়ের জামাই মো. মশিউর রহমানকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা ২০ অক্টোবর ব্যাংকের ৩৪৪তম পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয় এবং তিনি ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। অথচ তিনি নিজেই এই সিকিউরিটিজের একজন পরিচালক।

ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ:

পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে শুধু চেয়াম্যানের জন্য আলাদা চেম্বার রাখার বিধান আছে। অন্য পরিচালকরা এ সুবিধা পাবেন না। তারা শুধু পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে যোগদান করে তাদের মতামত তুলে ধরবেন। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আলাদা চেম্বার ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে, যদিও চেম্বারের নেমপ্লেটে মিটিং রুম লেখা থাকে। এছাড়া ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ রয়েছে। যেমন প্রমোশন, বদলি, ঋণ বিতরণ, অডিট রিপোর্ট তৈরিতে নির্দেশনা প্রদান অর্থাৎ ব্যাংকের যাবতীয় কাজই ইসি চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া হয় না।

এব্যাপারে মো. আব্দুল জলিল গণমাধ্যম কে বলেন, জামাতা মো. মশিউর রহমানকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া প্রসঙ্গে মো. আব্দুল জলিল বলেন, তিনি (মশিউর রহমান) ইসলামী ব্যাংকেরই চাকরিজীবী। বোর্ড তাকে ওখানে পাঠিয়েছে। মশিউর রহমান এফসিএ- তিনি ব্যাংকেরই। এরমধ্যে জামাতা হয়েছেন। খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ৮৬ সাল থেকে চলমান। ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু প্রশ্ন উঠার পর সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি। ফাইলটি বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা যা ভালো মনে করে। বেয়াইকে (জামাতার মামা) ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে ম্যানেজার পদমর্যাদায় নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেখানকার সদস্য। তিনি মিটিংয়ে থাকেন, সিদ্ধান্ত দেন। তার সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা আমরা বলি না। তিনি অভিযোগ করেন, তার নিজের ভূমিকার কারণে ব্যাংকের ভেতরের কিছু লোক নাখোশ আছে। তবে আরও সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে বলে আলাপকালে জানান মো. আব্দুল জলিল। ব্যাংক সূত্রের খবর, খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ ইস্যু নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম (ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ) ইসলামী ব্যাংক পরিদর্শন করে। এরপরই তড়িঘড়ি করে ঋণ পাশের ইসির সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। ফাইলটি পাঠানো হয় বোর্ডে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর